১. ন্যায়বিচার ও সততা
ন্যায়বিচারে দৃঢ় হও – (সূরা আন-নিসা ৪:১৩৫)
সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না – (সূরা আল-বাকারা ২:৪২)
ন্যায্য হও – (সূরা আল-মায়েদা ৫:৮)
কথা বলার সময় পূর্ণ মাপ দাও – (সূরা আল-আনআম ৬:১৫২)
২. সততা ও বিশ্বস্ততা
আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ কর – (সূরা আন-নাহল ১৬:৯১)
আপনার শপথ রাখুন – (সূরা আল-মায়েদা ৫:৮৯)
অন্যায়ভাবে সম্পদ গ্রাস করো না – (সূরা আল-বাকারা ২:১৮৮)
৩. দয়া ও উত্তম বাক্য ব্যবহার
মানুষকে ভালো কথা বলুন – (সূরা আল-বাকারা ২:৮৩)
ভাল কথা বলুন – (সূরা আল-ইসরা ১৭:৫৩)
পিতা-মাতা ও এতিমদের প্রতি সদয় হও – (সূরা আল-ইসরা ১৭:২৩)
৪. বিনয় ও নম্রতা
পৃথিবীতে অহংকারের সাথে হাঁটবেন না – (সূরা আল-ইসরা ১৭:৩৭)
মানুষের প্রতি অহংকার দেখাবেন না – (সূরা লুকমান ৩১:১৮)
মুমিনদের প্রতি নম্র হও – (সূরা আল-হিজর ১৫:৮৮)
৫. ধৈর্য ও আত্মসংযম
সীমালঙ্ঘন করো না – (সূরা আল-বাকারা ২:১৯০)
গুপ্তচরবৃত্তি করো না – (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:১২)
অতিরিক্ত সন্দেহ পরিহার করো – (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:১২)
৬. দানশীলতা ও উদারতা
যা দেওয়া হয়েছে তা ব্যয় কর – (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৪)
এতিমদের তাদের সম্পদ দাও – (সূরা আন-নিসা ৪:১০)
দরিদ্রদের খাওয়াও – (সূরা আল-ইনসান ৭৬:৮)
৭. ক্ষমাশীলতা ও ন্যায়পরায়ণতা
খারাপের পরিবর্তে ভালো প্রতিদান দাও – (সূরা ফুসসিলাত ৪১:৩৪)
ক্ষমা কর এবং ভালো কাজের আদেশ দাও – (সূরা আল-আরাফ ৭:১৯৯)
শ্রেষ্ঠ উপায়ে প্রতিদান দাও – (সূরা আল-মুমিনুন ২৩:৯৬)
৮. ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক নীতি
সৎকর্ম ও তাকওয়ায় সহযোগিতা কর – (সূরা আল-মায়েদা ৫:২)
পাপে সহযোগিতা করো না – (সূরা আল-মায়েদা ৫:২)
সকলেই ভালো কাজে প্রবেশ করো – (সূরা আল-হিজর ১৫:৪৬)
৯. শিষ্টাচার ও সম্মান
সালামের উত্তরে আরও সুন্দর সালাম দাও – (সূরা আন-নিসা ৪:৮৬)
একজনকে অবমাননাকর নামে ডাকবে না – (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:১১)
কেউ কাউকে উপহাস করবে না – (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:১১)
গীবত করো না – (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:১২)
১০. প্রজ্ঞা ও চিন্তাশীলতা
যা জানা নেই তা নিয়ে কথা বলো না – (সূরা আল-ইসরা ১৭:৩৬)
প্রজ্ঞার সাথে দাওয়াত দাও – (সূরা আন-নাহল ১৬:১২৫)
সাহিহ হাদিস: উত্তম চরিত্রের মূল উপাদান (বাংলা)
উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য নিম্নলিখিত সাহিহ হাদিস গুলো শ্রেণীবদ্ধভাবে উপস্থাপন করা হলো:
১. ন্যায়বিচার ও সততা
হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"যে আমাদের প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।" (সহিহ মুসলিম: ১০২)
হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি সেই, যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকার করে।" (আল-মুʻজাম আল-আওসাত: ৬১৯২, হাসান)
হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"ঈমানের দিক থেকে সবচেয়ে পরিপূর্ণ সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।" (সুনান আবু দাউদ: ৪৬৮২, সহিহ)
২. দয়া ও উত্তম আচরণ
হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"উত্তম চরিত্রের চেয়ে কোনো আমল ওজনের পাল্লায় ভারী নয়।" (সুনান আবু দাউদ: ৪৭৯৯, সহিহ)
হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হবে না।" (সহিহ বুখারি: ৬০১৩, সহিহ মুসলিম: ২৩১৯)
হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"সেই ব্যক্তি প্রকৃত মুসলিম, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।" (সহিহ বুখারি: ১০, সহিহ মুসলিম: ৪০)
৩. বিনয় ও নম্রতা
হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে নম্র করবে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন।" (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৮)
হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ।" (সহিহ মুসলিম: ৩৫, সহিহ বুখারি: ৯)
হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"যে অহংকারের সাথে চলাফেরা করবে, কিয়ামতের দিন সে মাটিতে ধ্বংস হয়ে যাবে।" (সহিহ বুখারি: ৫৪৫২, সহিহ মুসলিম: ২০৮৮)
৪. ধৈর্য ও আত্মসংযম
হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"প্রকৃত শক্তিশালী সেই ব্যক্তি নয়, যে কুস্তিতে জয়ী হয়; বরং প্রকৃত শক্তিশালী সেই, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।" (সহিহ বুখারি: ৬১১৪, সহিহ মুসলিম: ২৬০৯)
হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"ধৈর্য একটি আলোস্বরূপ।" (সহিহ মুসলিম: ২২৩, সহিহ বুখারি: ৪৩)
হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল করে দেন।" (সহিহ বুখারি: ১৪৬৯)
৫. দানশীলতা ও উদারতা
হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"দান করা সম্পদকে কখনো হ্রাস করে না।" (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৮)
হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"সবচেয়ে উত্তম দান হলো সেই, যা অতিরিক্ত সম্পদ থেকে করা হয়।" (সহিহ বুখারি: ১৪১৯, সহিহ মুসলিম: ১০৩৪)
হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা সামান্য হয়।" (সহিহ বুখারি: ৬৪৬৪, সহিহ মুসলিম: ২৮১৮)
৬. ক্ষমাশীলতা ও ন্যায়পরায়ণতা
হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"মানুষকে ক্ষমা করো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন।" (মুসনাদ আহমাদ: ৭০০১, হাসান)
হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"যে ব্যক্তি দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হবে না।" (সহিহ বুখারি: ৬০১৩, সহিহ মুসলিম: ২৩১৯)
হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"একজন শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়, তবে দুর্বল মুমিনের মধ্যেও কল্যাণ রয়েছে।" (সহিহ মুসলিম: ২৬৬৪)
৭. ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক নীতি
হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা চায়, তা তার ভাইয়ের জন্যও চায়।" (সহিহ বুখারি: ১৩, সহিহ মুসলিম: ৪৫)
হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি সে, যে অন্যদের জন্য সবচেয়ে উপকারী।" (আল-মুʻজাম আল-আওসাত: ৬১৯২, হাসান)
হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তার সম্পর্ক বজায় রাখেন।" (সহিহ বুখারি: ৫৯৮৮, সহিহ মুসলিম: ২৫৫৫)
৮. শিষ্টাচার ও সম্মান
হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সেই ব্যক্তি, যার আচরণ সবচেয়ে ভালো।" (সহিহ বুখারি: ৩৫৫৯, সহিহ মুসলিম: ২৩২১)
হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"কেউ কাউকে উপহাস করবে না, হতে পারে সে তার চেয়ে উত্তম।" (সুনান আত-তিরমিজি: ২৫০৬, হাসান সহিহ)
হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।" (সুনান আবু দাউদ: ৪৯৪৩, সহিহ)
৯. প্রজ্ঞা ও চিন্তাশীলতা
হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"পরিকল্পনা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর তাড়াহুড়ো শয়তানের পক্ষ থেকে।" (সুনান আত-তিরমিজি: ২০১২, হাসান সহিহ)
হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।" (সহিহ বুখারি: ৬০১৮, সহিহ মুসলিম: ৪৭)
হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"তিনজন একসঙ্গে থাকলে, দুজন গোপনে কথা বলবে না, যাতে তৃতীয়জন কষ্ট না পায়।" (সহিহ মুসলিম: ২১৮৪)
এই হাদিসগুলো আমাদের জীবনে উত্তম চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 🌿